মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

😒প্রবাসী নারীরা যেমন আছে এক প্রবাসী নারীর গল্প

 >দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অনন্য অবদান রাখছেন ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী। এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রবাসীদের অবদান স্বীকার করে, প্রস্তাবিত বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


 অর্থাৎ, কোনো প্রবাসী কর্মী বিদেশ থেকে এক হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে তিনি পাবেন ১ হাজার ২০ টাকা। এছাড়াও তাদেরকে আনা হবে বিমা সুবিধার আওতায়। নিঃসন্দেহে এ তো প্রবাসী কর্মীদের জন্য খুবই সুখের খবর।


 কিন্তু বিদেশ থেকে রক্ত পানি করে দেশে টাকা পাঠানো প্রবাসীরা কেমন আছেন সেখানে? বিশেষ করে যদি তিনি নারী হন?


  বাংলাদেশ থেকে যে সকল নারী বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে যান, তারা এদেশের সবচে দুঃখী-দরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি।


 সাধারণত ঋণমুক্তি, পরিবারের আর্থিক উন্নতি ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরদেশে যাত্রা করেন। এসব অসহায় নারীর অধিকাংশই প্রবাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ান রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর খপ্পড়ে পড়ে আর্থিক ঋণদায়গ্রস্ত হয়ে।


 ঘাম বিক্রি করে হালাল উপার্জনের জন্য দূর দেশে পাড়ি জামানো এসব নারীর মধ্যে অধিকাংশই যৌন দাসীবৃত্তির শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ছেন প্রবাসে। ফলে ক্রমাগত বিদেশ থেকে নির্যাতিতা নারীর ফিরে আসার সংখ্যা বাড়ছে।


  বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য বিদেশে যাওয়া নারীদের ৮০ শতাংশই যান সৌদি আরবে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নির্যাতন ও কাজের নিরাপদ পরিবেশের অভাবে অন্তত ১ হাজার ৩৫৩ জন নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। এ বছর প্রথম তিন মাসে ফিরেছেন কমপক্ষে আরো ৬৩৬ জন নারী।


  তবে ফিরে আসা নারী কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশিই হবে। কারণ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে নিজ দায়িত্বে চলে যাওয়া প্রবাসী নারীদের তথ্য নেই ব্র্যাকের কাছে।


  বিগত কয়েক বছরে বিদেশে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার বেড়েছে বহুগুণে। কারণ, মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচে পাড়ি জমানো যাচ্ছে সিরিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর, জর্ডান, মরিশাস, ওমান, লেবানন, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে।


  কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকেরা যত সহজে বিদেশে যাচ্ছেন, ততোটাই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সেখানে। দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী শ্রমিকদের প্রায় সবারই বিদেশে পৌছানোর সাথে সাথে পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নেয় সেখানের মনিবেরা।


 বাধ্য করে বন্দী জীবন যাপনে। এমনকি দেশে পরিবারের সদস্যদের সাথেও স্বাধীনভাবে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। অধিকাংশই চুক্তি অনুযায়ী মজুরি পান না। উল্টো শিকার হচ্ছেন শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের।


 এসব বর্বর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অসহায় নারী দেশে ফিরতে চাইলে তাঁর পরিবারের কাছে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের মুক্তিপণ দাবির মতো ঘটনাও ঘটছে।


  ‘এক দশকে বাংলাদেশের নারী অভিবাসন : অর্জন, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা’ শীর্ষক ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২৬৪ জন নির্যাতিতা প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১.৩৩ শতাংশ নারী।


 যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩.২৫ শতাংশ এবং মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩.২১ শতাংশ। এছাড়া কোনো বেতন পাননি ১৫.২৬ শতাংশ নারী। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগেছেন ৪৩.৩৭ শতাংশ। 


এসব কর্মীর ১৭.৫০ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত, বিচ্ছিন্ন ও স্বামী পরিত্যক্তা এবং ৬.৬০ শতাংশ বিধবা। ৬৬. ৯০ শতাংশ বিবাহিত এবং ৯ শতাংশ অবিবাহিত।


  প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ সালে ২ হাজার ৯০৬ জন নারী কর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবসি’ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রয় নেন।


  নির্যাতিতা শ্রমিকরা দেশে ফিরে আবার অন্য ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে এসব নারী। হচ্ছেন তালাকপ্রাপ্তা। তাহলে কোথায় দাঁড়াবে এই অসহায় মানুষগুলো! তাদের শরীর ও মন নির্যাতনের চিহ্নে জর্জর।


  বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের চুক্তির পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে এ পর্যন্ত প্রায় ২লক্ষাধিক গৃহকর্মী গেছেন। এরমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন প্রায় ৬ হাজার গৃহকর্মী।


 এ বছরই ফিরে এসেছেন অন্তত ১ হাজার নারী গৃহকর্মী। চলতি বছরের মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবের রিয়াদের ইমিগ্রেশন ক্যাম্প থেকে দেশে ফিরেছেন ৩৬০ জন নারী গৃহকর্মী। আর ফেরত আসা প্রত্যেক নারীই কম বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।


  ২০১১ সালে ফিলিপাইন প্রবাসী নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য সৌদি আরবে একটা সংসদীয় প্রতিনিধিদল পাঠায়। ফিরে এসে তারা সংসদকে জানিয়েছিলেন, আমরা আমাদের মেয়েদের ধর্ষিত বা নির্যাতিত হওয়ার জন্য সৌদি আরবে বিক্রি করতে পারি না।


  এই যখন অবস্থা তখন নিশ্চয় সময় এসেছে, এদেশের প্রবাসী নারী শ্রমিকদেরকে নিয়ে ভাবার। বিদেশে তাদের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রের মনোযোগী হওয়ার।


 আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সকল দেশ ব্যর্থ হবে কিংবা যাদের আন্তরিকতার অভাব থাকবে অথবা যারা আমাদের নারী শ্রমিকদেরকে 'যৌনদাসী' ভেবে 'আমদানি' করতে চায় তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রকে অবশ্যই অনমনীয় হতে হবে।



কারো কাছে লাইক-কমেন্ট পাবোনা জানি প্রবাসীদেরকে কেউ পছন্দ করেনা 😥😢😢

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রবাসিদের কস্ট 😥

  আমাদের বুঝতে একটু কস্ট    হয় যে প্রবাসিরা  বিদেশ গেলে কেন দেশে আসে না বা দেশে আসার কথা চিন্তা করে না, না করার কারণ তারা দেশে ফিরলে তাদের ...