মেয়ের বয়স ২০ বছর হলেও তাকে কখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি মাহতাব মিয়ার (ছদ্মনাম)। উভয়পক্ষে শুধু ছবি দেখেই বাবা-মেয়ের পরিচয়-সম্পর্ক।
একদিন মুখে দিগন্ত ছড়ানো হাসি নিয়ে সেই মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা পাঠাতে ব্যাংকে আসেন মাহতাব।আমি তখন মালয়েশিয়ার অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজে পার্ট টাইম চাকরি করি পড়াশোনার ফাঁকে। প্রতিদিন বাংলাদেশি শ্রমিক, চাকরিজীবীদের টাকা পাঠাই দেশে আত্মীয়দের কাছে।
অনেক গল্প, অনেক কষ্ট, অনেক আনন্দের কথা টাকাগুলোর সঙ্গে আসে-যায়। এর মধ্যে এমন দুই-একটা গল্প যেন গেঁথে যায় আমাদের মনে।
মাহতাব মিয়া ২০ বছর আগে মালয়েশিয়া এসেছিলেন অবৈধ পথে। দেশ ছাড়ার সময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে আসেন তিনি।
এরপর মেয়ে জন্মেছে, বড় হয়েছে, স্কুলে পড়াশোনাও করেছে। একসময় ভাল একটা সম্বন্ধ এসে বিয়েও ঠিক হয়েছে।
যে বাবার প্রবাসের রোজগারে এই সব সম্ভব হচ্ছে সেই বাবাকে মেয়ে কোনও দিন সামনাসামনি দেখেনি।
টাকা দিতে এসে মাহতাব বলেন, মেয়ের বিয়ের খবরে তিনি যে আনন্দ অনুভব করছেন তাতে নিজের এতদিনের কষ্ট যেন ভুলে গেছেন।
এই ঘটনার প্রায় বছরখানেক পর বৈধ কাগজ হাতে পেয়ে দেশে ফেরেন মাহতাব, যখন তার মেয়ে ছিলেন সন্তানসম্ভবা।
ঠাণ্ডু মিয়ার বয়স চল্লিশের কোঠায়। ১৮ বছর আগে এসেছিলেন মালয়েশিয়ায় অবৈধপথে। পরের আঠারোটা বছর মুখ বুজে কাজ করে গিয়েছেন।
জেলে যাওয়ার ভয় আর কষ্টের কাজ মাথায় নিয়ে মাসে মাসে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন।
নিজের জীবনের স্বর্ণ সময় পার হয়ে যাওয়ার পর একদিন বৈধ কাগজ হাতে আসে। কাছের বন্ধুরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে ঠাণ্ডুকে দেশে পাঠান বিয়ে করাতে।
এর কিছু দিন পর আবার তার বন্ধুরা ব্যাংকে আসেন। ঠাণ্ডু বিয়ে করছে; সবাই মিলে টাকা তুলে পাঠান বিয়ের উপহার হিসাবে।
দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। মালয়েশিয়াতে কর্মরত প্রবাসীরাও তার অংশীদার।
বৈধপথে এখানে কাজ করতে আসার নিয়ম ও সুযোগ- সুবিধার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না
থাকায় অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমান বিদেশে, যার পরিণতিতে অমানবিক জীবনযাপন করতে হয় অনেককে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন